২. নিরক্ষরতা:
নিরক্ষরতা বাংলাদেশের একটি অন্যতম নাগরিক সমস্যা। লেখাপড়া না জানার কারণে নিরক্ষর ব্যক্তি রাষ্ট্র ও সমাজের উপকারে আসেনা বরং সমাজের বোঝা স্বরূপ । নিরক্ষর বলতে সেই ব্যক্তিকে বুঝায়, যার কোনো অক্ষর জ্ঞান নেই। সরকারের প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালে 'সম্পূর্ণ সাক্ষরতা আন্দোলন' (Total Literacy Movement) শুরু করে । সম্পূর্ণ সাক্ষরতা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও নিরক্ষরতা দূর করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে নিরক্ষরতার হার খুবই বেশি । এর অন্যতম কারণ তাদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা। দরিদ্র শ্রেণির সন্তানেরা মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও লেখাপড়া করতে পারে না । অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী টাকার অভাবে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না । এর মধ্যেও অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি, বেসরকারি ব্যাংক এবং সংস্থা অর্থ সাহায্য দিয়ে দরিদ্র অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে অবদান রাখছে ।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ : সরকার ও নাগরিকের করণীয়:
নিরক্ষর জনসমষ্টিকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করা সরকারের পক্ষে একা সম্ভব নয় । শিক্ষিত সকল মানুষকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। আর যারা নিরক্ষর, তাদের নিজেদেরকেও লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী হতে হবে। সকলে সম্মিলিতভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে পারলে জাতীয় উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হবে ।
দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করার জন্য সরকার ও নাগরিকদের যেসব কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, সেগুলো আলোচনা করা হলো ।
১. তথ্য সংগ্ৰহ: নিরক্ষর মানুষের সঠিক সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকা ও অবস্থানভেদে প্রচলিত পেশার সমস্যা ও সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে হবে । সরকার প্রকল্প গ্রহণ ও টাস্কফোর্স গঠন করে এ কাজটি করতে পারে । সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে ।
২. বয়স্ক শিক্ষা: গ্রামে গ্রামে বয়স্ক শিক্ষা ও খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষাদানে সরকারকে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে (এনজিও) নিয়োজিত করতে হবে । এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষিত বেকারদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে ।
৩. কর্মমুখী শিক্ষা: সাধারণভাবে নিরক্ষর বয়স্করা আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় আগ্রহী হয় না, তাদেরকে তাদের পেশার সাথে সংযুক্ত করে কর্মমুখী শিক্ষার আওতায় আনতে পারলে তারা তাদের অর্জিত শিক্ষা ও অক্ষরজ্ঞান সহজে ভুলবে না ।
৪. শিক্ষার জন্য ঋণ ও অনুদান প্রথা চালুকরণ: নিরক্ষরদের শিক্ষা আনুষ্ঠানিক নয়, তবুও তাদেরকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিলে তারা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হবে । এরূপ ঋণ, অনুদান, বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান করা একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষিত ও সম্পদশালীদের এগিয়ে আসতে হবে । জনগণ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য বদান্যতার মনোভাব নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।
৫. নাগরিকদের অংশগ্রহণ: নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য শিক্ষা উপকরণ থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যাপারে সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন কাজ করছে। যেমন— আহসানিয়া মিশন, ব্র্যাক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, ইউসেপ ইত্যাদি । সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব হলে জাতীয় অগ্রগতির শক্ত ভিত রচিত হবে। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ পেশাভিত্তিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত হবে ।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ব্যক্তিগতভাবে আমরা আমাদের বাসায় কেউ নিরক্ষর থেকে থাকলে তাকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি । অথবা বন্ধুদের সাথে মিলে আমরা নিরক্ষরতা দূরীকরণে ক্লাব গড়ে তুলতে পারি । আমরা দরিদ্র ছেলেমেয়েদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি । নাগরিক হিসেবে আমাদের এই কাজ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।
আরও দেখুন...